Hot Posts

10/recent/ticker-posts

তালেবান কেন সবার চোখের মণি হয়ে উঠছে?



  বিশ্বের রাজনৈতিক মঞ্চে তালেবানদের পুনরুত্থান গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বিশেষ করে ২০২১ সালে আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের পর থেকে আন্তর্জাতিক মহলে তাদের ভূমিকা, কার্যক্রম এবং গঠনতন্ত্র সম্পর্কে নানা আলোচনা হচ্ছে।

 কিন্তু প্রশ্ন উঠে, তালেবানরা কেন সবার চোখের মণি হয়ে উঠছে? তাদের কর্মকাণ্ড, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কীভাবে পৃথিবীকে প্রভাবিত করছে?

 আফগানিস্তানে তালেবানদের পুনরায় ক্ষমতায় আসা

 ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করে এবং দেশটির সরকারকে উতখাত করে। 

দীর্ঘ ২০ বছর পর তারা আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি বড় অবাক কান্ড ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সেনাদের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও কাবুলের পতন দ্রুত ঘটে এবং এটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশগুলোর মধ্যে বড় ধরনের আলোচনার সৃষ্টি করে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

 তালেবানদের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। কিছু দেশ তাদের শাসনকে স্বীকৃতি দেয়নি, আবার কিছু দেশ সীমিতভাবে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে।

 চীনের মতো দেশগুলো তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী, অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষভাবে মানবাধিকার ইস্যুতে তাদের কঠোর সমালোচনা করে। তবে তালেবানরা চেষ্টা করছে তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দৃঢ় করার।

আফগান জনগণের প্রতি তালেবানের প্রতিশ্রুতি

তালেবানরা তাদের শাসনের মাধ্যমে আফগান জনগণের জন্য এক নতুন ব্যবস্থা তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 


যদিও তারা আগের মত কঠোর শাসন এবং আইনে বিশ্বাসী, তথাপি তারা কিছু ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন: কিছু নারীদের কর্মক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন নীতিমালা প্রবর্তন


 যদিও এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আরও অনেক কাজ বাকি, তথাপি বিশ্ববাসী তালেবানদের প্রতি মনোভাব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে।

মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট


তালেবানদের পুনরুত্থান শুধুমাত্র আফগানিস্তান বা পাকিস্তান নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক গতিবিধির উপর প্রভাব ফেলছে।

 বিশেষত, পাকিস্তান, ভারত, চীন, এবং ইরানের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের পরিবর্তন অনেকটাই বিশ্ব রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তালেবানরা যে ধরনের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ নীতিমালা গ্রহণ করছে, তা আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনীতি, এবং দৃষ্টিভঙ্গির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে

 যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ ও শান্তির পথ

 তালেবানদের ইতিহাস জুড়ে রয়েছে সন্ত্রাসবাদ ও যুদ্ধের গল্প, তবে বর্তমানে তাদের শান্তির কথা বলা হলেও অনেকেই সন্দেহ পোষণ করছে। আফগানিস্তানের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা কি সত্যিই দীর্ঘস্থায়ী হবে? 


এই প্রশ্নটি আজও আন্তর্জাতিক মহলে উঠছে। পশ্চিমা বিশ্বের একাধিক নেতা এবং মানবাধিকার সংগঠন তাদের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। তালেবানদের রাজনৈতিক অভ্যুত্থান এবং তার পরবর্তী কর্মকাণ্ড বিশ্বরাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে উঠেছে। 


একদিকে তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী শাসন ব্যবস্থার পুনঃস্থাপন ঘটাতে চাইলেও, অন্যদিকে আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়া চালু করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 


আফগানিস্তানের ভবিষ্যত এবং তালেবানের ভূমিকা এখন সবার জন্য একটি অমীমাংসিত প্রশ্ন। এর প্রভাব শুধু আফগানিস্তান নয়, বরং পুরো বিশ্বের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে গভীরভাবে অনুভূত হবে।