গাজায় আহতের চিকিৎসা ও শিক্ষার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার কথা ভাবছে জাপান |
জাপানের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেন, জাপান সরকার গাজা থেকে যুদ্ধাহতদের চিকিৎসার জন্য জাপানে আনার পরিকল্পনা করছে। তিনি বলেন, তার প্রশাসন এমন একটি নীতিমালা তৈরির জন্য কাজ করছে যা গাজার আহত ও অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য জাপানে আনার অনুমতি দেবে।
সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়া এই তথ্য জানিয়েছে। জাপানে গাজা যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি, টোকিও গাজার জনগণের জন্য শিক্ষাগত সহায়তার কথাও বিবেচনা করছে।
জাপানি সংসদে দেওয়া এক ভাষণে ইশিবা বলেন, "আমরা এমন একটি পরিকল্পনার কথা ভাবছি যার মাধ্যমে গাজার অসুস্থ ও আহতদের চিকিৎসা প্রদান করা যেতে পারে।"
সরকার এই বিষয়ে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, "শুধু চিকিৎসা সেবাই নয়, আমরা গাজার জনগণের জন্য শিক্ষার সুযোগ তৈরির কথাও ভাবছি।"
ইসরায়েলি অবরোধের কবলে থাকা গাজা বর্তমানে চরম মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যদিও সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। হাসপাতালের কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আহত এবং গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার জন্য অন্যান্য দেশে স্থানান্তর করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

শরণার্থীদের ছাত্র হিসেবে গ্রহণের জন্য যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল, তা কি গাজার বাসিন্দাদের সাহায্য করার জন্য উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে? সেই প্রকল্পের অধীনে, জাপান জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত ৮২ জন সিরীয় শরণার্থীকে ছাত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে।
এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নেতাদের জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা প্রদান করা।
প্রধানমন্ত্রী ইশিবা এই পরামর্শের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "আমরা গাজার জন্যও একই ধরণের প্রকল্প শুরু করার কথা বিবেচনা করছি এবং সরকার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা চালাবে।"
জাপানের শরণার্থী গ্রহণের হার দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত। দেশটির শরণার্থী নীতিকে অনেকেই রক্ষণশীল বলে মনে করেন। ২০২৩ সালে জাপান ১৩,৮২৩ জন শরণার্থী আবেদন পেয়েছিল। তবে, তাদের মধ্যে মাত্র ১,৩১০ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, যা মোট আবেদনকারীর ১০ শতাংশেরও কম।
জাপান তার কঠোর শরণার্থী নীতির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়েছে, কিন্তু সিরিয়ার শরণার্থীদের ছাত্র হিসেবে গ্রহণের উদ্যোগ দেশটির শরণার্থী নীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গত শনিবার পুনরায় খোলা রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে ৫০ জন ফিলিস্তিনি রোগী মিশরে প্রবেশ করেছেন। তাদের মধ্যে ৩০ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু এবং তাদের সঙ্গীরাও রয়েছেন।

গাজার হাসপাতালগুলির পরিচালক জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি অঞ্চল থেকে চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরিত হওয়ার অপেক্ষায় ৬,০০০ রোগী রয়েছেন। এছাড়াও, আরও ১২,০০০ রোগী রয়েছেন যাদের "জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন"।
গাজা বর্তমানে ওষুধ, অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম এবং জরুরি চিকিৎসা সরবরাহের ঘাটতির সম্মুখীন। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বেশিরভাগ হাসপাতাল ইউনিট আংশিকভাবে চালু রয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক এবং নার্সের অভাবে চিকিৎসা পরিষেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাপান সরকার যদি গাজা থেকে অসুস্থ ও আহতদের চিকিৎসার জন্য গ্রহণ করে, তাহলে এটি একটি উল্লেখযোগ্য মানবিক পদক্ষেপ হবে।

সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য শিক্ষার সুযোগ প্রদানের জন্য জাপান ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। গাজার ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যেতে পারে। একই উদ্যোগ নিলে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের অসংখ্য মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলিও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে, তারা বলেছে যে এই ধরনের পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে গাজার জনগণের জন্য একটি বড় সাহায্য হতে পারে। তবে, এই ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক জটিলতা, ভিসা সমস্যা এবং তহবিল সংক্রান্ত সমস্যাগুলি বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।
জাপান সরকার যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে গাজার অনেক অসুস্থ ও আহত মানুষের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত সুযোগ হতে পারে। এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

